হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে ওয়ালী ফকিহ-এর প্রতিনিধি জিহাদ ও সংগ্রামের ক্ষেত্রের পরিবর্তনের প্রসঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেন: আগে মুখোমুখি সংঘাত মূলত যুদ্ধক্ষেত্রে ঘটত; দুই দল, দুই দেশ বা দুই ব্যক্তি মুখোমুখি হতো, অল্প বা মাঝারি সময়ের মধ্যেই কেউ একজন জয়ী হতো, আর ক্লান্তির কারণে উভয়পক্ষই সরে যেত। কিন্তু আজকের দিনে সংঘাতের ক্ষেত্র চিন্তা ও মানসিকতার জগতে চলে এসেছে। মানসিকতা সহজে ক্লান্ত হয় না, তাই এই লড়াই প্রতিদিন অব্যাহত থাকে। যদি কোনো পক্ষ এক মুহূর্তও ঢিলে দেয় বা একদিন বিশ্রাম নিতে চায়, প্রতিপক্ষ সঙ্গে সঙ্গে প্রভাব বিস্তার করে ফেলে। তাই সফল সেই, যে প্রথমে নতুন কথা বলে এবং নতুন ভাষা ও বক্তব্যের মাধ্যমে বেশি মানুষের মন জয় করতে পারে।
আজকের কর্তব্য: শত্রুর তথ্য প্রচারের একচেটিয়া দখল ভাঙা
তিনি আরও বলেন: প্রতিটি মাযহাব, দল, গোষ্ঠী ও মতবাদ হলো এক খালি সাদা পৃষ্ঠা, যা সকালে দৃশ্যমান হয়। যে আগে লিখতে পারে, যে আগে নিজের ধারণা, পরিচয়, ধর্ম ও ভাবনা উপস্থাপন করে, সেই-ই বিজয়ী হয়। যদি আমরা পিছিয়ে যাই এবং অন্যরা আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়, তবে আমরা পরাজিত হবো। শিয়াদের পরিচয় আমাদের নিজেদের হাতেই দিতে হবে, নতুবা শত্রুরা আমাদের পরিচয় দেবে। আজ বিশ্বজুড়ে শিয়া সমাজ সম্পর্কে যে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, তার বড় অংশ এসেছে ওয়াহাবি ও ইসলামের শত্রুদের বর্ণনা থেকে। কারণ তারা শক্তি, সম্পদ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের ব্যাখ্যা চাপিয়ে দিয়েছে। তাই আজ আমাদের কর্তব্য হলো তথ্য প্রচারের এই একচেটিয়া দখল ভাঙা। আমাদের অবরোধ সরাতে হবে, দেয়াল ভাঙতে হবে এবং জনমত গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে।
হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন হাকিম ইলাহি বলেন, আগে বৈশ্বিক তথ্য মাধ্যম সীমিত ছিল। তখন CNN ও BBC-এর মতো কিছু মাধ্যমই নিয়ন্ত্রণ করত। পরে আল-জাজিরা, আল-আরাবিয়া ও অন্য নেটওয়ার্কের আবির্ভাব সেই একচেটিয়া দখল ভেঙেছে। তবে এর মানে এই নয় যে তারা সত্য বলছে। হ্যাঁ, আল-মানার ও আল-মায়াদিনের মতো নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে, কিন্তু বৈশ্বিক মর্যাদা পেতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। হাওযা নিউজ এজেন্সি-কেও এই একচেটিয়া ভাঙায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে এবং সঠিকভাবে বাস্তবতা তুলে ধরতে হবে।
কে রক্ষা করবে হাওযা-এ-ইলমিয়াহ?
তিনি বলেন: আমাদের কর্তব্য হলো সত্য, বাস্তবতা ও সমাজের বাস্তব চিত্র রক্ষা করা। প্রশ্ন হলো, কে রক্ষা করবে হাওযা-এ-ইলমিয়াহকে? কে রক্ষা করবে আলেমদের মেধা, চিন্তাভাবনা, সংস্কৃতি, সমাজ ও ধর্ম প্রচারের প্রচেষ্টাকে? উদাহরণস্বরূপ, হাওযা নিউজ এজেন্সিতে করা “আখুন্দরা কী করেন?” শীর্ষক প্রতিবেদন ছিল একই সঙ্গে আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি সাধারণ মানুষের মনে একটি মৌলিক প্রশ্ন ও বড় সংশয়কে সামনে আনে। তাই আলেমদের পরিচর্যা ও সুরক্ষা আপনাদের দ্বারাই হওয়া উচিত। সুতরাং সত্য ও বাস্তবতা রক্ষা করা আপনাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, যা এতদিন ভালোভাবেই সম্পাদিত হয়েছে।
আলেমরা সমাজের ‘বুদ্ধি’
ভারতে ওয়ালী ফকিহ-এর প্রতিনিধি বলেন: বুদ্ধি, চিন্তা ও ধারণার উৎস হলো আলেমরা, তাই বলা হয় আলেমরা সমাজের বুদ্ধি। আর আপনারা হচ্ছেন সমাজের চোখ ও কান-যারা সংবাদ প্রচার করেন। এটি একটি দ্বিমুখী সম্পর্ক। অর্থাৎ, আপনারা যেমন আলেমদের চিন্তা-ভাবনা সমাজে পৌঁছে দেন, তেমনি সমাজের বাস্তবতাও আলেমদের জানাতে পারেন। এতে আলেমরা বুঝতে পারেন আজ সমাজে কী ঘটছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বাস্তবতা সঠিকভাবে না জানালে ভুল সিদ্ধান্ত তৈরি হবে এবং আমরা সঠিক পথে অগ্রসর হতে পারব না।
আজকের যুবকের মৌলিক প্রশ্ন
তিনি বলেন: আজকের যুবকের মৌলিক প্রশ্ন হলো-আল্লাহকে জানা, ধর্মের প্রয়োজনীয়তা বোঝা এবং জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া। এগুলো কে প্রকাশ করবে? আপনারাই। আলেমরা সমাজের বুদ্ধি, কিন্তু আপনারাই সমাজের চোখ ও কান। গণমাধ্যম ইসলামী উম্মাহর জন্যে, এমনকি অমুসলিমদের মাঝেও, এক শক্তিশালী প্রহরী ও নিরবচ্ছিন্ন পর্যবেক্ষক হতে পারে, যা তথ্য সংগ্রহ করে হাওযায় পৌঁছে দেবে। সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই জ্ঞান উৎপন্ন হবে।
আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আল-জাজিরা, CNN ও BBC-এর সঙ্গে
হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন হাকিম ইলাহি হাওযার জন্যে সংবাদমাধ্যমে মারজাআত-এ-ইতিলাআরসানি (তথ্য প্রচারের কর্তৃত্ব) অর্জনকে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন: একদিন আমি আয়াতুল্লাহ আ’রাফির কাছে বলেছিলাম যে হাওযার জন্য একটি স্বাধীন সংবাদ সংস্থা থাকা জরুরি, যা তথ্য প্রচারে নেতৃত্বের মর্যাদা পাবে। এটি হাওযার জন্য একপ্রকার “ওয়াজিব আইনী” দায়িত্ব। এ লক্ষ্য অর্জনে বড় সরঞ্জাম, প্রচুর চেষ্টা ও দূরদর্শিতা প্রয়োজন। আজ আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আল-জাজিরা, CNN, BBC এবং বিশ্বব্যাপী সক্রিয় অন্যান্য নেটওয়ার্কের সঙ্গে। যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, তবে তাদের সমপর্যায়ের সরঞ্জাম থাকতে হবে। তবে তাদের পঞ্চাশ শতাংশ সামর্থ্য থাকলেও আপনারা এগিয়ে যেতে পারেন। কারণ আপনাদের কাছে আছে আন্তরিকতা ও প্রেরণা, যা তাদের নেই। তারা এটি করে পেশাগত ও দুনিয়াবি
কারণে, কিন্তু আপনারা এটিকে দায়িত্ব, আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকার এবং এক ঐশী মিশন হিসেবে দেখেন। তাই সংবাদ প্রচারে নেতৃত্ব পেতে আপনাদের নিরলস পরিশ্রম করতে হবে।
তিনি আরও যোগ করেন: আপনাদের সংবাদ প্রচারে ভবিষ্যত্-দৃষ্টি থাকতে হবে। বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রতিরোধমূলক ক্ষেত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পূর্বাভাস দিতে হবে। এটি মুসলিম উম্মাহর নেতাদের আরও উন্নত, নির্ভুল ও গভীর সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। গণমাধ্যমকে ভবিষ্যতের জন্য আলোকবর্তিকা হতে হবে।
ভারতে ওয়ালী ফকিহ-এর প্রতিনিধি বলেন: আজ আমাদের হাওযা তরুণ দাঈ তৈরি করছে, কিন্তু আগামী ত্রিশ বছরে আমাদের সমাজ হবে প্রবীণ সমাজ। তাহলে কি এই দাঈরা প্রবীণদের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, নাকি তরুণদের জন্য? তথ্য প্রচারে আপনাদেরও এ ধরনের দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে এবং সমাজের অবস্থা সঠিকভাবে প্রতিফলিত করতে হবে।
ধারা সৃষ্টি ও বক্তব্য নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা
তিনি বলেন: জনমতকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগী করতে ধারা সৃষ্টি ও বক্তব্য নির্মাণ অপরিহার্য। বাস্তবতা ঘটে গেছে, কিন্তু গণমাধ্যম দেখাতে পারে যে এগুলো কোথা থেকে এসেছে এবং কোথায় পৌঁছাবে। আমাদের অবশ্যই নতুন ধারা তৈরি করতে হবে এবং নতুন বক্তব্য নির্মাণ করতে হবে। যদি আমরা তা করতে না পারি, তবে ক্ষেত্র হারাবো। বিজয়ী সেই, যে নতুন বক্তব্য উপস্থাপন করবে এবং নতুন ধারণা দিয়ে নতুন মানসিকতা তৈরি করবে।
হুজ্জাতুল ইসলাম ও মুসলিমিন হাকিম ইলাহি হাওযা নিউজ এজেন্সির আন্তর্জাতিক কার্যক্রমের প্রশংসা করে বলেন: আপনারা যে তথ্য প্রচার করেছেন, তার প্রতিফলন অত্যন্ত ইতিবাচক হয়েছে এবং তা প্রশংসার যোগ্য। এমনকি আমি কল্পনাও করিনি যে এর প্রভাব এতটা হবে। এ বিষয়ে বিশেষত ভারতের প্রসঙ্গে কয়েকটি দিক উল্লেখ করতে চাই।
আপনার কমেন্ট